পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব
পুরান ঢাকার সাকরাইন বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব গুলোর একটি। সাকরাইন উৎসব মূলত পৌষসংক্রান্তি; ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব (Shakrain Festival) সার্বজনীন ঢাকার উৎসবের রূপ নিয়েছে। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো, বাড়ি ঘর ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আগুন নিয় খেলা, সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুশে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ।
Youtube Video : Click
সাকরাইন কবে হয়?
ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন’ উৎসবে পৌষসংক্রান্তি ও মাঘ মাসের শুরুর প্রথম প্রহরে উদযাপিত হয়। সেই হিসেবে প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি নানা আয়োজনে পালন হয়। প্রতিবারের মত এইবছর ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারী শুক্রবার (৩০ পৌষ) পুরান ঢাকায় সাকরাইন অনুষ্ঠিত হবে।
সাকরাইন উৎসবের ইতিহাস
সাকরাইন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্রাণ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো বিশেষ মুহূর্ত। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয় সাকরাইন।
এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে।
বাংলায় দিনটি পৌষ সংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।
সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব –
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে এই দিনটি কেন্দ্র করে বর্তমানে এটি একটি অন্যতম উৎসব ও আমেজের পরিণত হয়েছে।
ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ না রেখে সকলে এই উৎসব পালন করে থাকেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করে পুরান ঢাকাইয়ারা।
সাকরাইনে কি হয়?
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ছোট বড় সকলেই অংশগ্রহণ করে এই উৎসবে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদ সুন্দর করে সাজানো হয় নানান ধরণের আলোকসজ্জায়। দুপুর হতেই শুরু হয় ঘুড়ি উড়ানো। আকাশে শোভা পায় নানা রঙ আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি।
কে কার ঘুড়ির সুতা কাটতে পেরেছে সেই প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। নানা কসরতে ঘুড়ির সুতা কেটে ফেলার আনন্দ আর চিৎকারও ভেসে আসে।
আতশবাজি ও ফানুষ
সন্ধ্যা নামলেই পুরান ঢাকার আকাশ হাজার হাজার আতশবাজির আলোয় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। সেই সাথে উড়ানো হয় রঙবেরঙা ফানুশ। অনেকেই আগুন মুখে নিয়ে আগুন খেলা দেখায়।
একজন মুখে কেরোসিন নিয়ে মুখের সামনে আগুনের মশাল ধরে, ফুঁ দিয়ে কেরোসিন আগুনের মশালে নিক্ষেপের ফলে আগুনের দলার সৃষ্টি হয় এটাই আগুন খেলা। বর্তমানে সাক্রাইন উৎসবে যোগ হয়েছে আধুনিক আরও অনুষঙ্গ। ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর হাজার পাওয়ারের সাউন্ড সিস্টেম।
পুরান ঢাকায় সাকরাইন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। বাড়িতে বাড়িতে থাকে মজার সব খাবারের আয়োজন। শীতের পিঠাপুলি, মুড়ি-গুড়, পায়েশ পরিবেশন চলে।
কোথায় যাবেন
সাকরাইনে যোগ দিতে প্রতিবছরই অনেকেই পুরান ঢাকায় ঘুরতে যান। পুরান ঢাকার প্রায় সব জায়গাতেই চলে এই আয়োজন। তবে আয়োজনের বেশি আমেজ পেতে যেতে পারেন সূত্রাপুর, লক্ষীবাজার, গেন্ডারিয়া, সদরঘাট, তাঁতিবাজার, হাজারীবাগ, নবাবপুর।
কখন যাবেন
সাকরাইন উৎসব শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। প্রায় সারা রাত ব্যাপী চলে নানা আয়োজন। সবচেয়ে ভালো লাগবে বিকেল ও সন্ধ্যার সময়টুকু। আপনি এমনভাবে রওনা দিন যেন বিকেলের মধ্যে পুরান ঢাকার কোথাও উপস্থিত হতে পারেন।
Comments
Post a Comment