মুন্সীগঞ্জ এর সেরা কিছু ভ্রমন করার জায়গা
9- ইদ্রাকপুর কেল্লা
ইদ্রাকপুর কেল্লা (Idrakpur Fort) মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্যের একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালিন বাংলার সুবাদার ও
সেনাপতি মীর জুমলা ইছামতি নদীর তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে এই কেল্লাটি নির্মাণ করেন। ৮২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭২ মিটার প্রস্থের ইটের তৈরি ইদ্রাকপুর কেল্লাটি মগ জলদস্যু এবং পর্তুগিজদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়।
লোকমুখে প্রচলিত আছে
ঢাকার লালবাগ কেল্লা থেকে ইদ্রাকপুর কেল্লা পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই কেল্লার প্রত্যেক কোণে বৃত্তাকার বেষ্টনী রয়েছে এবং দুর্গের একমাত্র খিলানাকার দরজা স্থাপন করা হয়েছে কেল্লার উত্তর দিকে। শত্রুর উদ্দেশ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রাচীরের গায়ে অসংখ্য ফোঁকর রয়েছে। পূর্ব দিকের মূল প্রাচীর দেয়ালের মাঝামাঝি একটি গোলাকার মঞ্চ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি দুর্গেই দূর থেকে শত্রুর চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইদ্রাকপুর কেল্লার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে চারটি (ধলেশ্বরী, ইছামতী, মেঘনা এবং শীতলক্ষা) নদীর অবস্থান। ১৯০৯ সালে মোঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ইদ্রাকপুর কেল্লাকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির মর্যাদা দেয়া হয়। প্রাচীর ঘেরা এই গোলাকার দূর্গটি এলাকায় এস.ডি.ও কুঠি হিসাবে পরিচিত।ধারণা করা হয় ইদ্রাকপুর কেল্লাটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৫৮ সালে এবং ১৬৬০ সালে তা শেষ হয়। দুই ভাগে বিভক্ত কেল্লার প্রাচীরের উত্তরপাশে কামান বসানোর তিনটি মঞ্চ রয়েছে। ১৮৪৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ইদ্রাকপুর দূর্গ মহকুমা প্রশাসনের বাস ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এটি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকার কাছে এবং দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসার সুবিধার জন্য ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ইদ্রাকপুরের জনপ্রিয়তা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিভাবে যাবেন
মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের পুরাতন কোর্ট অফিসের কাছে ইদ্রাকপুর কেল্লা অবস্থান। রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে দিঘীরপাড় এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট বাসে করে মুক্তারপুর এসে জনপ্রতি ১০ টাকা অটোরিক্সা ভাড়া এবং ২০-২৫ টাকা রিক্সা ভাড়ায় ইদ্রাকপুর কেল্লায় আসা যায়।
কোথায় থাকবেন
সাধারণত ঢাকা থেকে দিনে মুন্সিগঞ্জ গিয়ে দিনেই ঢাকায় ফেরা যায়। তবুও প্রয়োজনে রাত্রি যাপনের জন্য মুন্সিগঞ্জে হোটেল থ্রি স্টার (01715-665829, 01715-177716r) কিংবা হোটেল কমফোর্ট এ ২০০ থেকে ৬০০ টাকায় রাতে থাকতে পারবেন। এছাড়া পদ্মা রিসোর্টেও (01713-033049) গ্রামীণ পরিবেশে রাত্রি যাপন করতে পারেন।
8-ষোলআনী সৈকত
ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানায় মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষা ষোলআনী প্রজেক্ট বর্তমানে ষোলআনী সৈকত (Sholoani Saikat) নামে পরিচিত। এই স্থানটি আগে দৌলতপুর নামে পরিচিত ছিল। নদী ভাঙ্গন রোধ করতে মেঘনা নদীর পাড়ে সিসি ব্লক দিয়ে বাধ নির্মাণের ফলে এই স্থানটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায় এবং তা প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। ঢাকা থেকে দূরত্ব কম হওয়ার কারণে বাইকারদের কাছে এই স্থান অতি অল্প সময়ে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ষোলআনী সৈকতের মনোরম পরিবেশে মেঘনা নদীর বুকে নৌযানের বিচরণ, অসীম নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো, অপূর্ব সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কিংবা ভরা জোছনার মোহনীয় রূপ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া এখানে নৌকা ভাড়া করে মেঘনার বুকে ভেসে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ষোলআনী সৈকতে যেতে চাইলে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে গজারিয়া পরিবহন, দাউদকান্দি অথবা গৌরিপুরগামী বিআরটিসি বাসে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিতে চড়ে প্রথমে রসুলপুর নেমে অন্য এক সিএনজিতে ষোলআনী স্ট্যান্ড পৌঁছে পায়ে হাটা দূরত্বে অবস্থিত ষোলআনী সৈকতে যাওয়া যায়। এছাড়া চাইলে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও সরাসরি ষোলআনী সৈকত আসা যায়।
গুলিস্তান থেকে ভবেরচর পর্যন্ত গজারিয়া পরিবহনের ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা এবং বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া ১১০ টাকা। ভবেরচর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। রসুলপুর থেকে ষোলআনী পর্যন্ত লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। আর ভবেরচর হতে ষোলআনী সৈকত পর্যন্ত সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া ২০০ টাকা।
7-পদ্মহেম ধাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার দোসরপাড়া গ্রামে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম (Padmahema Dham) ফকির লালন শাহের একটি আশ্রম। বাউল বাড়ি হিসেবে পরিচিত নৈসর্গিক এই স্থানে লালনের পদার্পণ না ঘটলেও প্রথম আলো পত্রিকার ফটো সাংবাদিক কবির হোসেন লালনের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনপূর্বক এই আশ্রমটি গড়ে তুলেছেন। ছায়া সুনিবির স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পাখ-পাখালির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ পদ্মহেম ধামে প্রবেশ করতেই নজরে পড়বে লালনের অন্যতম নিদর্শন পাথরের তৈরি বিশাল একটি একতারা। মায়াময় প্রকৃতির মাঝে আরো নজরে পড়বে মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঠের দোতলা ঘর, বৈঠকখানা ও লালনগীতি বিদ্যালয়। আশ্রমের পাশ দিয়ে তিনদিকে বাক নিয়ে চমৎকার মোহনার সৃষ্টি হওয়া ইছামতী নদী বহমান। আর তাই আশ্রম থেকে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য অনেক বেশী উপভোগ্য। ইছামতী নদী দিয়ে অধিকাংশ সময় নৌকায় সংসার গড়ে তোলা বেদেদের দল যেতে দেখা যায়। পদ্মহেম ধামে ক্যাম্পিং করে রাত্রিযাপন করা যায়।
আশ্রমের সামনের বিশাল খোলা মাঠে প্রাচীন বটগাছের নিচে দীর্ঘ ১২
বছর ধরে শীতের সময় দুই পূর্ণিমা তিথিতে এই আশ্রমে লালন ফকিরের উৎসব, মেলা ও সাধুসঙ্গের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সন্ধ্যা থেকে সারারাত গান, চা ও পিঠার সাথে মুখর থাকে আশ্রম প্রাঙ্গণ। সে সময় জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সাধু গুরুসহ অনেক বাউল শিল্পী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, দর্শনার্থী ও লালনভক্তদের আগমন ঘটে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর ও মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জে যেতে পারবেন। মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর থেকে বাইক/সিএনজি নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম আশ্রম পৌঁছাতে পারবেন।
সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে, ঢাকার পোস্তগোলা থেকে ৩০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় মোল্লার বাজার চলে আসুন। মোল্লার বাজার এসে নদী পাড় হতে হবে বালুচর যাওয়ার জন্য। নদীর অন্য পাড়ে যেতে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়া নিবে। নদী পাড় হয়ে সিএনজিতে নিয়ে সরাসরি পদ্মহেম ধামে যাওয়া যায়। সম্পূর্ণ সিএনজি ভাড়া লাগবে প্রায় ২০০ টাকা। আর সিএনজি ঠিক করতে দরদাম করে নিন।
এছাড়া গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশ থেকে বেতকা, টঙ্গিবাড়ী বা সোনারংগামী বাসে সরাসরি সিরাজদিখান বাজারের গোয়ালবাড়ি নামক স্থানে নেমে অটো/সিএনজিতে চড়ে লালনের আশ্রম পদ্মহেম ধামে যেতে পারবেন।আবার যানজট এড়িয়ে নদীপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মুন্সিগঞ্জ যাওয়া যায়। ঢাকা সদর ঘাট থেকে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ যেতে ২ ঘণ্টার মত সময় লাগে।
6-সোনারং জোড়া মঠ
মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে রয়েছে বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাচীন এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সোনারং জোড়া মঠ (Sonarong Jora Moth)। মঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও এটি মূলত একটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের প্রস্থরলিপি অনুসারে, রুপচন্দ্র নামের এক হিন্দু বণিক ১৮৪৩ সালে বড় কালীমন্দির ও ১৮৮৬ সালে ছোট শিবমন্দিরটি নির্মাণ করেন এবং ১৮৩৬ সালে শম্ভুনাথ নামের এক ব্যাক্তি এই মঠ স্থাপন করেন। কথিত আছে, এই মন্দিরেই শ্রী রুপচন্দ্রের শেষকৃত্য সম্পন হয়েছিল। প্রায় ২৪৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অষ্টভুজাকৃতি সোনারং জোড়া মঠ ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ হিসাবে খ্যাত। চুন সুরকি নির্মিত পুরো দেয়াল বিশিষ্ট এই মঠের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২১ ফুট এবং বড় মন্দিরের উচ্চতা ১৫ মিটার। মন্দিরের গোলাকার গম্বুজাকৃতি ছাদের শিখরে রয়েছে একটি ত্রিশূল। আর প্রত্যেক মূল উপাসনালয় ঘরের সাথে আছে একটি করে বারান্দা।
সোনারং জোড়া মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে বড়
একটি পুকুর। বিভিন্ন সময়ে দুর্বৃত্তরা মন্দির থেকে বিভিন্ন মূল্যবান পাথর, কষ্টি পাথরের কলস, শিবলিঙ্গসহ অনেক মূল্যবান জিনিপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। বর্তমানে মঠের উপরের দিকের খোড়লগুলোতে থাকা ঘুঘু, শালিক ও টিয়াসহ নানা জাতের পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে মন্দিরের চারপাশ। অসাধারণ কারুকার্যমণ্ডিত সোনারং জোড়া মঠের সৌন্দর্য কালের বিবর্তনে অনেকটা বিলীন হলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকা প্রাচীন এই মঠটি দেখতে দূর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করে।
কিভাবে যাবেন
সোনারং জোড়া মঠ
দেখতে হলে মুন্সিগঞ্জ জেলার সোনারং গ্রামে যেতে হবে। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর বা মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী বা শ্রীনগর যেতে পারবেন। শ্রীনগর বা টঙ্গীবাড়ী থেকে রিকশা, অটোরিকশা নিয়ে সোনারং জোড়া মঠে যেতে পারবেন।
5- বাবা আদম মসজিদ
মুন্সিগঞ্জ জেলার মীরকাদিমের দরগাবাড়ী গ্রামে কাফুরশাহ্ কর্তৃক নির্মিত ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট বাবা আদম মসজিদ (Baba Adam Mosque) অবস্থিত। সুদূর আরবে জন্ম নিয়েও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সাধক বাবা আদম শহীদে (রাঃ) ভারতবর্ষে পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে ১১৭৮ সালে সেন শাসনামলে তিনি মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমে আগমণ করেন। সেই সময় মুন্সিগঞ্জ ছিল বল্লাল সেনের রাজত্বে। স্থানীয় যুদ্ধে অত্যাচারী হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ হারান এই সাধক। শহীদ বাবা আদমের মৃত্যুর ৩১৯ বছর পর ১৪৮৩ সালে বাবা আদম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৫৩০ বছর ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি পুরাকালের আত্নত্যাগী বাবা আদমের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
মুসলিম স্থাপত্য শৈলীতে লাল
পোড়ামাটির নকশাকৃত ইটের ব্যবহারে নির্মিত মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট ও প্রস্থ ৩৬ ফুট। ৬ টি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অভ্যন্তরীন অংশের পশ্চিম দেয়ালে অর্ধ বৃত্তাকার কারুকাজ খচিত অবতল মেহরাব ও চার কোনায় গ্রানাইট পাথরের নির্মিত চারটি অষ্টভুজাকৃতির অলংকৃত মিনার রয়েছে। মসজিদের সম্মুখভাগের তিনটি খিলানাকৃতির প্রবেশ পথের মধ্যে বর্তমানে কেবল মাঝখানের পথটিই ব্যবহৃত হয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের দুইপাশে প্রাচীন চিত্র ফলকের কাজ নজর কাড়ার মতো। এছাড়া মসজিদের পূর্ব দেয়ালের ওপরের দিকে ফারসি ভাষায় খোঁদাই করা কালো পাথরের ফলক রয়েছে। মসজিদের দক্ষিন পূর্ব কোণে আছে বাবা আদমের মাজার।১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহ্যবাহী বাবা আদম মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আনা হয় এবং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই মসজিদের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। বছর জুড়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থীরা এই মসজিদ দেখতে আসেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক পথে
মুন্সিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর বা মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জে যাওয়া যায়। মুন্সিগঞ্জ হতে রিকশা নিয়ে ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই বাবা আদম মসজিদ পৌঁছে যাবেন।
চাইলে নৌপথে মুন্সিগঞ্জ যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ঢাকার সদর
ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চে চড়ে বসুন। এরপর মুন্সিগঞ্জ থেকে রিকশা নিয়ে সরাসরি চলে যান বাবা আদম মসজিদে।
4-আড়িয়াল বিল
বর্ষাকালে অথৈ জলরাশি আর শীতকালে বিস্তীর্ণ সবুজ শস্যক্ষেতে পূর্ণ দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিলের নাম আড়িয়াল বিল (Arial Bil)। ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় ১৩৬ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের অধিকাংশ অংশ মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলনস্থল নদীর প্রবাহের ফলে শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝে আড়িয়াল বিলের উৎপত্তি।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে সাজানো আড়িয়াল বিল
ঋতুভেদে নতুন নতুন বৈচিত্রের প্রকাশ ঘটে। বর্ষাকালে সবুজে ঘেরা বিলের স্বচ্ছ পানিতে শাপলা, কচুরি পানার ফুল এবং নানা জাতের পাখির উপস্থিতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য মাত্রা যুক্ত করে। আর শীতকালে বিলের স্থলভাগে নানা ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ করা হয়। শাপলা তোলা, নৌকায় চড়ে মাছ ধরা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভ্রমণকারী সময় কাটাতে ছুটে আসেন আপন রুপে অনন্য আড়িয়াল বিলে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের দূরত্ব প্রায় ৪২
কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর বা মিরপুর থেকে মাওয়াগামী যেকোন বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে যাওয়া যায়। শ্রীনগরের বাজার থেকে রিকশা নিয়ে গাদিঘাট যেতে হবে। ঘাট থেকে হাতে টানা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় শ্রীনগর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আড়িয়াল বিলে যেতে পারবেন। চাইলে কয়েকজন মিলে ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে নৌকা ভাড়া করে সারাদিন আড়িয়াল বিল ঘুরতে পারবেন।
3-জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বসতবাড়িকে ঘিরে জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সটিকে সাজানো হয়েছে। প্রায় ৩০ একর আয়তনের এই বাড়িতে অসংখ্য বৃক্ষরাজির ছায়াময় প্রকৃতির মাঝে বিভিন্ন পশুপাখির ম্যুরাল, কৃত্রিম পাহাড়-ঝরনা, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট এবং দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ত্রিকোণাকৃতির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘরে জগদীশ চন্দ্র বসুর পোর্ট্রেট, বিভিন্ন গবেষণাপত্র, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তিতে লেখা চিঠি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঠানো চিঠি এবং ১৭টি দুর্লভ ছবি প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে।
বাংলাদেশের প্রথম সফল
বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সমৃদ্ধ শিক্ষা জীবনের একপর্যায়ে ১৮৮০ সালে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে লন্ডন গমন করেন। কিন্তু তিনি পদার্থ, রসায়ন ও উদ্ভিদ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে ১৮৮৪ সালে দেশে ফিরে আসেন। মহান এই বিজ্ঞানী জীবিত অবস্থায় তাঁর সমস্ত সম্পত্তি জনকল্যাণে দান করে গেছেন। ১৯২১ সালে তাঁর জমিতে সুরুজ বালা সাহা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে স্যার জগদীশ ইনস্টিটিউশন (Sir JagadishChandra Bose
Institution) ও
কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালে জগদীশ ইনস্টিটিউশনের উদ্যোগে জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স বাস্তব রূপ লাভ করে। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই মহান কীর্তিমানের বর্ণাঢ্য জীবনাবসান হয়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার গোলাপ শাহ
মাজারের কাছ থেকে ঢাকা-দোহার রুটে চলাচলকারী বাসে চড়ে রাড়িখাল তিন দোকানের সামনে নেমে রিকশা ভাড়া করে জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকার পোস্তাগোলা ব্রীজ হতে মাওয়াগামী যেকোন বাসে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর বাজারে নেমে ইজিবাইক নিয়ে রাড়ীখাল গ্রামে অবস্থিত জগদীশ চন্দ্র বসু কমপ্লেক্স যেতে পারবেন।
2-মাওয়া ফেরি ঘাট
মাওয়া ফেরি ঘাট
(Mawa Feri Ghat) পর্যটকদের জন্যে নদী
ভ্রমণ এবং ইলিশ ভোজন এর জন্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা। মাওয়া ফেরি ঘাটের পাড়ে রয়েছে বেশকিছু খাবার হোটেল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ খাওয়ার জন্য অনেকেই মাওয়া ঘাটে ছুটে আসেন। এখানকার মাছের বাজারে ইলিশ ছাড়াও অনেক বাহারি প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়।
ঢাকার কাছে অবস্থান হওয়ায় চট
করে পদ্মা পাড়ের এই মাওয়া ফেরি ঘাট হতে দিনে গিয়ে দিনেই ঘুরে আসা যায়। তাই একদিনের ভ্রমণ করার জায়গা হিশেবে অনেকের কাছে মাওয়া ঘাট অনেক জনপ্রিয় একটি স্থান। রুপালী জলের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে পাড় ধরে দূরে হেটে যাওয়া কিংবা পদ্মা পাড়ের শান্ত সবুজ গ্রামের যান্ত্রিকতা ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ আপনাকে আছন্ন করে রাখবে। নৌকায় ঘুরে দেখতে পারবেন পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। তাছাড়া ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কি আর অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব! আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পদ্মার বুকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পীড বোটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারেন।
মাওয়া ঘাট যাওয়ার উপায়
ঢাকার গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী থেকে বিআরটিসি কিংবা ইলিশ পরিবহণের বাসে চড়ে ৭০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি মাওয়া ঘাটে যেতে পারবেন। এছাড়া মিরপুর ১০, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে স্বাধীন পরিবহণ মাওয়া ফেরি ঘাটের পথে যাত্রা করে।
1- পদ্মা রিসোর্ট
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে অনেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে ব্যকুল হয়ে উঠেন। ভ্রমনপিয়াসী সেইসব মানুষের সময় এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম পদ্মা রিসোর্ট (Padma Resort)।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিংবা কোন বিশেষ দিনে ধরাবাঁধা রুটিনের বাইরে এসে গ্রামীণ পরিবেশে একটি দিন কাটানো নিঃসন্দেহে আপনাকে আগামী কিছুদিনের জন্য আরো উদ্যমী করে তোলবে। পরিবার বা প্রিয়জন নিয়ে ঢাকা ও আশপাশ থেকে একদিনে ঘুরে আসার জন্যে আপনার পছন্দের জায়গা হতে পারে পদ্মা নদীর পাড়ের এই পদ্মা রিসোর্ট।
পদ্মা রিসোর্টে মোট
১৬ টি ডুপ্লেক্স কটেজ রয়েছে। প্রতিটি কটেজই একটি বড় বেডরুম, দুটি সিঙ্গেল বেডরুম এবং একটি ড্রইংরুমের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর দুটি সুন্দর ব্যালকনি ও একটি বাথরুম রয়েছে। বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরী প্রতি কটেজে ৮ জন অনায়াসেই থাকা যায়। কটেজগুলো বেশ সাজানো-গুছানো এবং পরিষ্কার-পরিছন্ন। বর্ষাকালে কটেজগুলোকে পানির রাজ্যে ভাসমান দ্বীপের মত মনে হয় আর শীতকালে কটেজের আশেপাশে নানান রঙের ফুলে ভরে থাকে। ১২ টি কটেজের নামকরণ করা হয়েছে বাংলা ১২ মাসের নাম অনুযায়ী আর বাকি ৪ টি কটেজের নাম দেয়া হয়েছে ঋতুর নামে। একটু নিরিবিলিতে থাকতে চাইলে বাংলা মাসের নামে পরিচিত পশ্চিম দিকের কটেজগুলো বেছে নিতে পারেন।
যা কিছু পাবেন পদ্মা রিসোর্টে
কটেজের বাইরে পদ্মার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য লেভিশ বিচ
চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিতে পারেন কিংবা ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে পারেন পদ্মার পাড়।বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউট করতে পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আদর্শ জায়গা। এখানে বন্ধুদের সাথে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বিচ ভলিবল, ঘুড়ি উড়ানো, ফ্রিজবি খেলায় মেতে উঠতে পারেন।
নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে বিভিন্ন ছোট
বড় নৌকার ব্যবস্থা করা আছে পদ্মা রিসোর্টে। রাবার বোট, স্পিড বোট বা কান্ট্রি বোটে ঘুরে আসতে পারেন পদ্মার বুক থেকে কিংবা ফিশিং বোটে করে চলে যেতে পারেন মাছ শিকারে। ভ্রমনকারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখানে প্রত্যেক বোটেই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পদ্মা রিসোর্ট যাবার উপায়
ঢাকার গুলিস্থান থেকে গাংচিল কিংবা ইলিশ পরিবহনের বাস
দিয়ে লৌহজং যেতে পারবেন। জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়া লাগতে পারে। আর যদি আপনি মিরপুর ১০, ফার্মগেট অথবা শাহবাগ থেকে যেতে চান তবে স্বাধীন পরিবহনের বাস আপনাকে লৌহজং পৌছে দেবে।
Comments
Post a Comment