Skip to main content

কক্সবাজার জেলায় দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা

 কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন অঞ্চল। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্যে বিখ্যাত এই জেলা চট্রগ্রাম থেকে দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এইখানে আছে আরও অনেক দর্শণীয় স্থান ও স্থাপনা। বিভিন্ন উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসে বৈচিত্রময় এই জেলার জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাতলি বীচ, হিমছড়ি, ইনানী বীচ, মেরিন রোড, সেন্টমার্টিন, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (COXSBAZAR SEA BEACH) নিয়ে কথা বলতেই প্রথমে মাথায় আসে এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অখণ্ড এ সাগর সৈকত দেশী বিদেশি পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ এবং মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্থের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে। 


সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন (Saint Martins Island)। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।



মহেশখালী (Maheshkhali) উপজেলা কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে এটি মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর থেকেই প্রায় ২০০ বছর আগে এই জায়গায়র নামকরণ হয়। যা মহেশখালী দ্বীপ নামেও পরিচিত। মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা নামে তিনটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। পান, মাছ, শুঁটকী, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদনে সমগ্র বাংলাদেশে এই উপজেলার সুনাম রয়েছে। কক্সবাজার থেকে ৪-৫ ঘন্টা সময় ব্যায় করলেই মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।


কক্সবাজার থেকে ২৩ কিলোমিটার আর হিমছড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ইনানী সমুদ্র সৈকত (Inani Sea Beach)। ভাটার সময় ইনানী সমুদ্র সৈকতে সেন্টমার্টিনের মত প্রবাল পাথরের দেখা মিলে। এখানে কক্সবাজারের মত সাগর এত উত্তাল থাকে না আর এই শান্ত সাগরই পর্যটকদের আরো বেশী বিমোহিত করে। সাধারণত বিকেল বেলায় ইনানী সৈকত ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। বিকেল বেলায় পর্যটক তুলনামূলক কম থাকে আর সাথে অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা পরবর্তীতে আপনার আফসুসের কারণ হতে পারে। এছাড়া টেকনাফ গামী মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে ইনানী বীচে যাবার সময় হিমছড়ির পাহাড়, সমুদ্র তীরের সাম্পান, নারিকেল ও ঝাউবন গাছের সারি আর চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আপনার ভ্রমণের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।


কক্সবাজার গিয়েছেন কিন্তু হিমছড়িতে যাননি কিংবা হিমছড়ির নাম শুনেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে হিমছড়ি অবস্থিত। হিমছড়ির ছোট বড় ঝর্ণা, পাহাড় আর ফটোগ্রাফিক সমুদ্রতট পর্যটকদের বিমোহিত করে রাখে। শীতল পানির ঝর্ণা, মেরিন ড্রাইভ রোড এবং বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত দেখতে আপনাকে হিমছড়ি আসতেই হবে। সারাবছরই হিমছড়িতে যেতে পারবেন তবে বর্ষায় ঝর্ণাগুলে পূর্নতা পায়।




ছেঁড়া দ্বীপ (Chera Dwip) বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বীপটি ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামে পরিচিত। ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সুনীল সাগর, আকাশ আর সূর্যাস্তের মিতালী দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে আসে। এছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে চাঁদের আলোয় যাদুকরী মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই অনেকে পূর্নিমার রাতে ক্যাম্পিং করতে আসেন এই অপূর্ব ছেঁড়া দ্বীপে।


কক্সবাজারের মহেশখালি উপজেলার ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সোনাদিয়া দ্বীপ (Sonadia Island) ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা। একটি খাল সোনাদিয়া দ্বীপকে মহেশখালি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এ দ্বীপের ৩ দিক থেকে আছে সমুদ্র সৈকত, আছে জীব বৈচিত্রের পরিপূর্ণ জলাবন, ছোট বড় খালের সমন্বয়ে প্যারাবন, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি এবং বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি। ছোট এ দ্বীপে মাত্র ১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। জীববৈচিত্রের অপূর্ব সমন্বয় দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সোনাদিয়া দ্বীপে ভীড় জমায়।



রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড (Radiant Fish World) বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিস অ্যাকুরিয়াম দেখার সুযোগ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় বিনোদনের নতুন সংযোজন এই ফিশ মিউজিয়াম। এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে এ আছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। বিরল প্রজাতির মাছ সহ এখানে আছে হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলাপাতা, পানপাতা, কাছিম, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙ্গাস, আউস সহ আরও অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সাগরের তলদেশের বৈচিত্রময় পরিবেশ। প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগবে এই মেরিন ফিস অ্যাকুরিয়াম পুরোটা ঘুরে দেখতে। অ্যাাকুরিয়ামে ঢুকলে মনে হবে আপনি সাগরের তলদেশে আছে, আর আপনার চারপাশে খেলা করছে বর্ণিল প্রজাতির নানা মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে সমুদ্রতলের এই প্রাণীজগতের মেলা চোখের সামনে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। এছাড়া ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে আছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, লাইফ ফিশ রেস্টুরেন্ট, দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, শিশুদের খেলার জায়গা, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, মার্কেটিং করার জন্য শপ ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি বার-বি-কিউ করার আয়োজন করা যাবে।


বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে শাহপরীর দ্বীপ (Shapuree Island/Shah Porir Dwip) অবস্থিত। এটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। মাত্র ৪০ হাজার জনসংখ্যার এই দ্বীপের মানুষের মাছধরা ও লবণ চাষ হচ্ছে প্রধান পেশা। এই দ্বীপে হাট-বাজার, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ ইত্যাদি সবই রয়েছে। প্রচলিত আছে বর্তমানে মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অতীতে এটি ছিল একটি দ্বীপ।

শাহপরীর দ্বীপে লাইফ গার্ড না থাকায় সাগরের জোয়ার-ভাটা নির্নয়ের কোনো ব্যবস্থাই নেই। তাই সাগরে নামতে হলে নিজ উদ্যোগে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিতে হবে। অবশ্যই ভাটার সময় সাগরে নামা থেকে বিরত থাকুন।


কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে ঐতিহ্যবাহী রামু রাবার বাগান (Ramu Rubber Garden) গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহায়তায় অনাবাদি জমি গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা ও বিস্তৃত সমতল পাহাড়ের মাঝে ২,৬৮২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রামু রাবার বাগানের চারপাশে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি।

শুরুর দিকে বাগানে ৫৮,০০০টি উৎপাদনক্ষম রাবার গাছ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১,৪০,০০০ টি গাছ রয়েছে। একটি রাবার গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করতে পারে এবং ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। রাবার বাগানের এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদিত হয়।

বর্তমানে এই বাগানটি দেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রাবার বাগান ও রাবারের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে রামু বাগানে ঘুরতে আসেন। রামু রাবার বাগানের খোলামেলা পরিবেশ পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।


নিভৃতে নিসর্গ পার্ক (Nivrite Nishorgo Park) একসাথে নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘ মালার মিলনমেলায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজারের ‘অচেনা দার্জিলিংয়ে’। নিভৃতে নিসর্গ পার্ক কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে মাতামুহুরি নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত। কক্সবাজার থেকে এই পার্কের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এবং চকরিয়া থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার। এর দক্ষিণে পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলা।

দুইপাশে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড় ও নদীর অপরূপ সান্নিধ্য এখানে। নদীতে নৌকা ভ্রমণে পাহাড় নদীর মিতালি দেখার সাথে সাথে দেখা যায় বিভিন্ন বন্য প্রাণী, পাহাড় বেয়ে ঝরে পড়া ঝরনা, নানা পাখির কলরব মন পুলকিত করবে। নীল জলরাশি দিয়ে যেতে যেতে দেখা মিলবে একাধিক সুউচ্চ সাদা পাথরের পাহাড়ের। 


সবুজ পাহাড় ঘেরা দৃষ্টিনন্দন এই জায়গাটি এত দিন পর্যটকের দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল। অচেনা এই পর্যটন স্পটের নামকরণ জেলা প্রশাসকের দেওয়া ‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’ হয়েছে মাত্র কয়েক দিন আগে। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নদীভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত এইখানে। পার্কটি নতুন হওয়ায় এখনো তেমন গুছানো পর্যটন বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। তবে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ চলছে বেশ। প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক ভিড় করে এই পার্কে।


কক্সবাজার জেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নে রামু চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বাকখালী নদীর তীরে লামাপাড়া খিয়াং (Lamapara Khiang) অবস্থিত। উনিশ শতকের শুরুর রামুর থু অং গিয়াও চৌধুরী লামাপাড়া খিয়াং নির্মাণ করেন। লামাপাড়া খিয়াংয়ে মার্বেল পাথরের মঞ্চের উপর স্থাপিত পিতলের বুদ্ধ মূর্তি আকারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি হিসাবে স্বীকৃত। খিয়াংয়ের স্থাপত্যশৈলী আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কক্সবাজার জেলার প্রায় সকল থানায় এই ধরনের খিয়াং রয়েছে। এদের মধ্যে কেবল মাত্র রামুতে প্রায় ২৩টি খিয়াং রয়েছে।

শামলাপুর সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে টেকনাফের কাছে বাহারছড়া ইউনিয়নে যেতে হবে। সবুজ ঝাউবন, মাছ ধরার নৌকা এবং জেলেদের ব্যস্ততা ছাড়া এখানে তেমন মানুষজনের দেখা মিলে না। আর এই নির্জনতাই ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে শামলাপুর সমুদ্র সৈকতের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। দৃষ্টিনন্দন এই সমুদ্র সৈকতটি বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও পরিচিত।

কক্সবাজার, ইনানি কিংবা সেন্টমার্টিনের মত জনমানুষ পূর্ণ না হলেও নীল জলরাশি, সূর্যাস্থ, জেলেদের মাছ ধরার কর্মতৎপরতা, স্থানীয় শিশু ও মানুষের বৈচিত্রময় জীবন আপনাকে নাগরিক জীবনের অস্থিরতা থেকে ভুলিয়ে রাখবে।


কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির (Adinath Temple) অবস্থিত। সনাতন ধর্মালম্বিদের কাছে এই মন্দিরের রয়েছে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা মহাদেবের নামানুসারে মন্দিরের নামকরন করা হয়েছে আদিনাথ। আবার আদিনাথের অন্য নাম মহেশ, যা থেকে মহেশখালি নামের সৃষ্টি। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বর্তমানে এই মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ও মসজিদ আছে এজন্য অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১০/১৫ দিন ব্যাপী মেলা বসে তখন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।


ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক (Dulahazara Safari Park) বা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার জেলার দক্ষিণ বন বিভাগের ফাসিয়াখালি রেঞ্জের ডুলাহাজারা ব্লকের অন্তর্ভুক্ত ৯০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। ১৯৯৯ সালে মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই সাফারি পার্কটি স্থাপন করে।

আটটি ব্লকে প্রতিষ্ঠিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলেও এখানে হরিণ ছাড়াও রয়েছে সিংহ, বাঘ, ভালুক, জলহস্তী, হাতি, গয়াল, কুমির প্রভৃতি প্রাণী। পর্যটকদের জন্য ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে রয়েছে একাধিক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও ডরমেটরী। পর্যবেক্ষণ বা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পশু পাখিদের মুক্ত বিচরণ দেখা যায়।


কুতুবদিয়া (Kutubdia) কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা। নানান রকম বৈচিত্র্য পরিপূর্ণ এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সমুদ্র সৈকত, লবণ চাষ, বাতিঘর এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।


দরিয়া নগর (Doria Nogor) পর্যটন কেন্দ্রটি হচ্ছে পাহাড়, সমুদ্র আর সূর্যের অপূর্ব মিলনস্থল। প্রকৃতির এ অপরূপ সমন্বয় অবলোকনের জন্য যেতে হবে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কলাতলী মোড় থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে। একদিকে দৃষ্টি জুড়ে বঙ্গোপসাগর আর অন্য দিকে পাহাড় এরই মাঝখান দিয়ে কক্সবাজার হতে টেকনাফগামী রাস্তা। এই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে সামনে পড়বে বড়ছেড়া গ্রামের পাঁচটি পাহাড়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠা দরিয়ানগর বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সুন্দর মনোরম পরিবেশে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটু নিরবিলিতে সমুদ্র দেখতে চাইলে দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকত হতে পারে আদর্শ জায়গা। দরিয়ানগরে উঁচু পাহাড়ের নিচ দিয়ে আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ পথ আছে, যা শাহেনশাহ গুহা নামে পরিচিত, আরও আছে ছোট কিছু ঝিরি ঝর্ণা। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হলে ভিন্ন স্বাদ নিতে চাইলে ঘুরে আসুন সেই গুহা।

বর্তমানে দরিয়া নগরে সবচেয়ে বড় আকর্ষন প্যারাসেইলিং। কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতে শুধুমাত্র দরিয়ানগর সৈকতেই রয়েছে প্যারাসেইলিং করার ব্যবস্থা। বর্তমানে দরিয়ানগরে দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্যারাসেইলিং করা যায়। স্যাটেলাইট ভিশন সি স্পোর্টস প্রতিষ্ঠানটির তিনটি প্যাকেজ আছে, এই প্যাকেজগুলো নিতে আপনাকে যথাক্রমে ১৫০০, ২০০০ ও ২৫০০ টাকা খরচ করতে হবে। আর ফানফেস্ট বীচ এক্টিভিটিজ নামের প্রতিষ্ঠানটির দুইটি প্যাকেজ রয়েছে। যেগুলো ১৫০০ ও ২০০০ টাকায় নেওয়া যায়। মোবাইল: 01730-63375701755-59699601762-592892। ফেইসবুক লিংকঃ www.facebook.com/funfestbd

জেনে রাখা ভালো, ১৫০০ টাকার রাইডে শুধু আকাশে উড়ায়। আর ২০০০ টাকার রাইডে আকাশে উড়ানোর পর নিচে সমুদ্রের পানিতে পা স্পর্শ করিয়ে আবার আকাশে উড়ানো হয়। সকল ক্ষেত্রেই ৫ থেকে ১২ মিনিট সময় পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৪৫০ ফুট পর্যন্ত ওপরে উঠানো হয়।

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

বর্তমানে কক্সবাজার ভ্রমনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড (Marine Drive Road)। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরিন ড্রাইভ রোডের এক দিকে রয়েছে উত্তাল সমুদ্র সৈকত আর অন্য দিকে রয়েছে সবুজের ঢাকা ছোট-বড় পাহাড়। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা ধারার দেখা মিলে। মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে বিস্তৃত সাগরের সমস্ত সৌন্দর্য্য আহরণ ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সেই সাথে সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট খ্যাত চিরহরিৎ বন। কক্সবাজারের কলাতলী বা সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়া যায়।



কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা হচ্ছে রামু। পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। রামুর উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর মাত্র দুই কিলোমিটার অদূরেই কেন্দ্রীয় সীমাবিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই রয়েছে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। এছাড়াও আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় আরো অনেক বৌদ্ধ বিহার।







Comments