সিলেট এর 10টি দর্শনীয় স্থান


full video watch : click now

10-ডিবির হাওর

ডিবির হাওর সিলেটের জৈন্তাপুরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।সিলেট শহর থেকে ডিবির হাওরের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। ইয়াম, ডিবি, হরফ কাটা, কেন্দ্রী বিল নামে এখানে মোট চারটি বিল রয়েছে। বর্ষাকালের পর বিলগুলো শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। তখন সমস্ত বিল জুড়ে হাজার হাজার লাল শাপলা ছড়িয়ে থাকে। ভোরে হাজারো লাল শাপলা আলোকিত করে রাখে চারপাশ। প্রকৃতি যেন আপন ইচ্ছের মাধুরীতে লাল শাপলার হাসিতে বিলগুলোকে সাজিয়ে দেয় পরম মমতায়। যেকোনো ভ্রমণপিপাসুদের সারাজীবন মনে রাখার জন্য শাপলা বিলে একটি সকালই যথেষ্ট। ডিবির হাওর তাই শাপলা বিল নামেও সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া এখানে প্রায় দুইশত বছরের পুরাতন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির রয়েছে। কথিত আছে, জৈন্তা রাজ্যের কোন এক রাজাকে ডিবির হাওরে কোথাও পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। ধারণা করা হয় তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে মন্দির নির্মিত হয়েছে। শীতকালে এই হাওর জুড়ে অথিতি পাখিদের রাজত্ব শুরু হয়। তখন সাদা বক, জলময়ুরী পানকৌড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে থাকে ডিবির হাওরের চারপাশ।

 


9-লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। বাংলাদেশের যে ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ১০টি জাতীয় উদ্যান আছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। ১২৫০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট উদ্যানটিকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও কম হবে। বিভিন্ন প্রকার গাছগাছালি পশুপাখি বনের শোভা আরো বৃদ্ধি করেছে। জীব বৈচিত্রে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান এই জাতীয় উদ্যানটি দেশে ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত। লাউয়াছড়া উদ্যান মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।



8-লালাখাল

লালাখাল বিভাগীয় শহর সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত. এই লালাখাল নদী ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদী, পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখালের ভূপ্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। ভরা পূর্ণিমায় জ্যোৎস্না ধোয়া নদী কিংবা মেঘ পাহাড় আর নদীর মিতালী দেখতে আপনাকে লালাখাল ঘুরে আসতে হবে। বর্ষাকালে লালাখালের পানি খুব ঘোলা থাকে তাই নভেম্বর থেকে মার্চ অর্থাৎ শীতকাল হচ্ছে লালাখাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

লালাখালের বিভিন্ন অংশে নীল, সবুজ এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মিলে। চাইলে তামাবিল অংশের স্বচ্ছ পানির সারি নদীর উপর দিয়ে স্পীডবোট বা নৌকায় লালাখালে যেতে পারেন। ৪৫ মিনিটের যাত্রা আপনাকে লালাখালের সৌন্দর্য্যে বাকরুদ্ধ করে রাখবে।


7-শিমুল বাগান

শিমুল বাগান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এই শিমুল বাগানে আছে প্রায় হাজার শিমুল গাছ। ২০০৩ সালের দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এই বাগান শুরু করেন। তাঁর নাম অনুসারেই এই জায়গার নাম জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান।

বসন্তকালে শিমুল বাগানের দিকে তাকালে গাছের ডালে ডালে লেগে থাকা লাল আগুনের ঝলখানি চোখে এসে লাগে। শিমুল ফুলের রক্ত লাল পাপড়িগুলোর এই সৌন্দর্য্য এখানে আসা সমস্ত মানুষের মনকেই রাঙিয়ে দেয়। এক দিকে মেঘালয়ের পাহাড় সারির অকৃত্রিম সৌন্দর্য্য অন্য দিকে রূপবতী যাদুকাটা নদী তীরের শিমুল বাগানের লাল ফুলের সমাহার মনে ভাল লাগার শিহরণ ধরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। চারপাশে ঝরা ফুলের ওপর হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে স্বর্গীয় লালগালিচায় বুঝি আপনি হেঁটে চলেছেন। 





6-পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষা একটি অপূর্ব গ্রামের নাম। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের এই গ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেঘালয় পাহাড় আর পিয়াইন নদীর পাড়ে অবস্থিত এই গ্রামেই আছে প্রকৃতির আরেক অপরূপ নিদর্শন পান্থুমাই ঝর্ণা। স্থানীয় মানুষের কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা বিভিন্ন নামে পরিচিত। কেউ একে বলেন ফাটাছড়ির ঝর্ণা আবার কেউবা ডাকেন বড়হিল ঝর্ণা, আর কারো চোখে এটি মায়াবতী!

উঁচু পাহাড় থেকে পাথর বেয়ে নেমে আসা আগ্রাসী জলের ধারা কিংবা চারপাশের প্রকৃতির দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলেও নিরাশ হবেন না কোন মতেই। মূল অবস্থান ভারতে হওয়া পরও ১০০ টাকায় ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে ঝর্ণার বেশ কাছে যাওয়া যায়। স্থানীয় মাঝিদের কথা মত নিরাপদ দূরত্বে থেকে অন্যোন্য এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি ছবি তোলা ভিডিও করতে পারবেন। আর চাইলে বাংলাদেশ অংশে থেকে জলপ্রপাত দিয়ে নেমে আসা জলে গা জুড়িয়ে নিতে পারবেন।


5-রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট  এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়। রাতারগুল সিলেটের সুন্দরবন নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি, আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

4-ভোলাগঞ্জ

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতি মায়ায় মোড়ানো ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল। ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রূপের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

ধলাই নদের উৎস মুখের পাথর পরিবেষ্টিত জায়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদা পাথর নামে পরিচিত। সাদাপাথর এলাকাটি দেখতে অনেকটা -দ্বীপের মত। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দুভাগে বিভক্ত হয়ে চারপাশ ঘুরে আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদীর পানির সাথে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়।

3-জাফলং

জাফলং প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।


 


2-বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।

বিছনাকান্দি মূলত জাফলং ভোলাগঞ্জের মতই একটি পাথর কোয়ারী। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে বিছনাকান্দিতে মিলিত হয়েছে। সেই সাথে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা বিছনাকান্দির প্রকৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পর্যটকদের কাছে বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি। প্রথম দেখায় আপনার মনে হবে যেন এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই প্রশান্তি আপনাকে বিছানাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার। যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছানাকান্দি।

 


1-টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরুপ সাজে সাজিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে।

টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহারগুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা বা ছড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশেছে। এই হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, এর আশেপাশের পানি খুবই স্বচ্ছ হওয়ায় উপর থেকে হাওরের তলা দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট বড় প্রায় ৪৬ টি দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম আছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে Ecologically Critical Area  হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট  এর তালিকায় স্থান করে নেয়।

 

Comments